::: www.sensongs.com ::: ® Ri - Mar Jaava - Fashion ::: www.se .mp3
Found at bee mp3 search engine

শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০১১

শিরোনামহীন -2

রোহান স্কুল থেকে ফিরছে। অত্যন্ত ক্লান্ত হলেও ও আনন্দে আছে। প্রতিদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে তার এরকম আনন্দ হয়। সে রাস্তার সবকিছু দেখতে দেখতে এগিয়ে যায়। এইতো প্রতিদিন এই ফুটপাতের ধারে ঝালমুড়ি বেচে এক মধ্যবয়স্ক লোক। পরনে শার্ট আর লুঙ্গি। সে লুঙ্গির নিচের দিকে ছেঁড়া। এই ছেঁড়া লুঙ্গি নিয়ে তার কোন আফসোস নেই। হাসিমুখে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে থাকে সে। কিন্ত রোহানের মনে হয় সেই হাসিতে কিছুটা মলিনতা মিশে আছে যেন।
রাস্তার পাশে এক বৃদ্ধ লোক বসে আছে। সামনে একটা থালা পাতা। সেখানে কিছু কয়েন আর কিছু ছেঁড়া দু’টাকার নোট রয়েছে। রোহানের ইচ্ছা করে এই বৃদ্ধকে কোনভাবে সাহায্য করতে। কিন্তু কিইবা করতে পারে ও? পকেট থেকে মলিন একটা দু’টাকার নোট থালায় ফেলে দেয় রোহান। বৃদ্ধ লোকটি যেন বিড়বিড় করে কি বলতে থাকে। হয়ত রোহানের জন্য দোআ করছে, হয়ত বা অন্য কিছু।
রোহান হাঁটতে হাঁটতে বাসার কাছে চলে এসেছে। রাস্তা ছেড়ে ও গলিতে ঢুকে পড়ল। নোংরা গলি, প্রচুর গর্ত আর কাদায় মাখামাখি অবস্থা। কিছুদূর হেঁটে ডানদিকে মোড় নেয় ও। রোহানের পাশ দিয়ে সাইকেল নিয়ে একটা লোক হুঁশ করে চলে যায়। রোহান বাসায় ঢোকে। তিনতলা একটা বিল্ডিংয়ের নিচের তলায় বাসা ওদের। বেশি বড় না এবং করুণ অবস্থা বিল্ডিংয়ের। দেয়ালের রং বেশিরভাগ স্থানেই উঠে গেছে, ইটের গাঁথুনি বের হয়ে পড়েছে। স্যাতসেতে একটা ভাব, আশেপাশে আরও অনেক বিল্ডিংয়ের কারণে আলো বাতাস ঠিকমত ঢোকে না। বাসায় ঢুকতেই রোহানের দেখা হয় ওর ফুপুর সাথে। ফুপু একটা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করেন,
কিরে, খুব ক্লান্ত নাকি?
রোহান বিরসমুখে উত্তর দেয়,
না।
যা হাতমুখ ধুয়ে নে।
হু।
রোহান দ্রুত ফুপুর সামনে থেকে সরে যায়। ফুপুর যথেষ্ট আন্তরিকতা সত্ত্বেও রোহান কখনই তার এই ফুপুর সাথে সহজ হতে পারেনি। সবসময়ই রোহান তার এই ফুপুকে এড়িয়ে চলে। রোহান কাধঁ থেকে ব্যাগ নামিয়ে ওর মায়ের ঘরের দিকে এগিয়ে যায়। দরজা দিয়ে দেখে ওর মা কাঁদছেন। রোহান একবার মনে করে ঘরে ঢুকবে। পরক্ষণেই মনে হয় কি হবে ঢুকে? ঢুকে তো প্রতিদিন একই দৃশ্য দেখে ও। রোহান ঘরে ঢুকলে ওর মা কাঁদা বন্ধ করে দেন। রোহান কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেন, কখনও তাও দেন না। কিছুক্ষণ পর সামনে একটা ইংরেজি উপন্যাস বা অন্য কোন বই খুলে গম্ভীর গলায় বলেন,
তুই যা এখন।
রোহান চুপচাপ বের হয়ে আসে। মা তখন বই পড়া শুরু করেন। তিনি প্রচুর বই পড়েন, বই দিয়ে তার ঘর ভর্তি।
রোহান দরজা থেকেই ফিরে যায়। ওর রুমে গিয়ে কাপড় চেঞ্জ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। ছোট একটা রুম। একটা মাত্র জানালা দিয়ে ওপাশের বিল্ডিংয়ের দেয়াল দেখা যায় শুধু। শুয়ে শুয়ে রোহানের মনে হয় এই বুঝি মা এল। ওকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠল, কি ব্যাপার বাবা, একা একা অন্ধকারে শুয়ে আছিস কেন? পড়াশোনা কেমন চলছে? কিন্তু মা আসেন না। কখনই আসেন না। রোহানের মা নিজের ঘর ছেড়ে কখনই বের হন না। মাঝে মাঝে একা একাই কাঁদেন, বাকি সময় বই পড়েন। কারো সাথেই তেমন কথা বলেন না। রোহানের জন্মের পর থেকেই ওর মা মানসিকভাবে অসুস্থ।
প্রথমদিকে কিছুটা কম ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সমস্যাটা বেড়েই চলেছে। রোহানের বাবার আর্থিক অবস্থার কারণে ডাক্তারও দেখানো হয়নি। রোহানের বাবা ছোট একটা অফিসে চাকরি করে।নিম্ন মধ্যবিত্ত ধরণের এক পরিবারে রোহানের বসবাস।
রোহানের কাঁদতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সে কাঁদতে পারে না। কান্না যেন গলা পর্যন্ত এসে আটকে যায়। আর বের হয় না, শুধু বুকের কোথায় যেন চাপ সৃষ্টি করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন